মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করে অবরুদ্ধ করা হয়েছে প্রায় ৩৫টি পরিবারের নারী-পুরুষ-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। গর্ভবতী নারী ও স্কুলগামী শিশু-কিশোরসহ ওইসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা দেড়শ’র উপরে। এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে বরিশাল নগরীর ২৫নং ওয়ার্ড রুপাতলী চান্দু মার্কেট এলাকায় মীরা বাড়ির সামনে। স্থানীয় মহিউদ্দিন কাঞ্জন মৃধা এহেন কাজটি করেছেন। তিনি অবশ্য এখানে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আর যাদের পূর্ব পুরুষরা ওই জমির মালিক এখন তারাই অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। এ ঘটনায় পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমির মালিক মোঃ নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মহিউদ্দিন কাঞ্চন মৃধাসহ ৯ জনকে নামধারী এবং ৮/১০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে বরিশাল বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং ৪৯)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কোতয়ালী মডেল থানাধীন ২৫নং ওয়ার্ডের রুপাতলী মৌজার জে.এল ৫৬, এসএ খতিয়ান নং ৪৮৫৮, আগত খতিয়ান ১৭৫৪ দাগ নং ২৭৩ এর মোট মোট ৪৫ শতাংশ জমির রেকর্ডিয় মালিক মন্তাজউদ্দিন মীরা ও মৃত আফতাব মীরা। তাদের ওয়ারিশগণ ওই জমি ভোগ দখলকারী হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। ওই জমি থেকে মন্তাজউদ্দিন এর ওয়ারিশগণের কাছ থেকে কয়েক হাত বদল হয়ে ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করেন জনৈক মহিউদ্দিন কাঞ্চন মৃধা। এরপর মহিউদ্দিন তার ক্রয়কৃত ১১ শতাংশ জমির পুরোটা বাউন্ডারী দেয়াল দিয়ে ভবন নির্মাণ করেন। কিন্তু তার চলাচলের কোন রাস্তা না থাকায় স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে রেকর্ডিয় সম্পত্তির রাস্তায় চলাচলের মৌখিক ব্যবস্থা করেন দেন মন্তাজউদ্দিন ও মৃত আফতাব মীরা ওয়ারিশগন।
এরপর দীর্ঘদিন থেকেই মহিউদ্দিন নিজের একার সড়ক বলে দাবী করে মৃত আফতাব মীরাসহ অন্যান্য ওয়ারিশগণের চলাচলে বাধা দেয়। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলরসহ সালিশ বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ মহিউদ্দিন। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ মহিউদ্দিন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও দলবল নিয়ে সড়কের মাঝখানে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করতে যায়। মামলার বিবাদী ও সাক্ষীগণ তাতে বাধা দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে চলে গেলেও কয়েকদিন পূর্বে হঠাৎ করেই সড়কের মাঝখানে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করে মহিউদ্দিন। এ ঘটনায় মৃত আফতার মীরার ছেলে মোঃ নুরুল ইসলাম মীরা বাদী হয়ে বরিশালের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলো মহিউদ্দিন কাঞ্চন মৃধা ও তার দুই ছেলে মোঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ (৩৫), মোঃ জসিম মৃধা (৩৭), মহিউদ্দিনের স্ত্রী ফিরোজা বেগম, লাভলী বেগম, মৃত ফজলে আলী মৃধার ছেলে মোঃ নাছির মৃধা, ছালাম মৃধার ছেলে রনি মৃধা ও মৃত নুরুজ্জামান মৃধার ছেলে মোঃ রনি মৃধা। এছাড়া মামলায় ৮/১০ জন অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি রুপাতলী চান্দু মার্কেট এলাকার মীরা বাড়ির সামনে ইটের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। প্রাচীরের অপরপাশে প্রায় ৩৫টি পরিবার বসবাস করে। যেসব পরিবারে শিশু ও কিশোর ও বৃদ্ধার সংখ্যা দেড়শ’ জনের মতো। অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছাড়াও রয়েছে গর্ভবতী নারী। প্রাচীর নির্মাণ করায় ওইসব বাড়িতে বসবাসকারীরা চলাফেরা করতে নানান দুর্ভোগে পড়ছেন। অন্যের বাড়ির দেয়াল টপকে, কারো দোকানের মধ্য দিয়ে শিশু কিশোর বৃদ্ধদের চলাচল করতে হয়। অনেক সময় মই দিয়ে ইটের প্রাচীর টপকে চলাচল করতে হচ্ছে বাড়িগুলোর স্কুলগামী শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ও অন্যদের।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির মোল্লা মুঠোফোনে জানান, তিনি ঢাকায় আছেন। তবে তিনি দেয়াল নির্মাণের সংবাদ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সাবেক কাউন্সিলর সুলতান সাহেব এ ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন কেননা তিনি সালিশ বৈঠক করেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঢাকা থেকে ফিরে বিষয়টি দেখব। বর্তমান জনবান্ধব সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এ ধরণের ইটের প্রাচীর নির্মাণ করায় স্থানীয়রা মানবাধিকার লংঘন বলছেন বিষয়টিকে। তারা এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র যুররতœ সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply